ডাবের ডবল সেঞ্চুরি!

ছবি সংগৃহীত

 

চাহিদা বাড়লে কম যোগানের অজুহাতে দাম বাড়ে—এমন পুরনো অস্ত্রকে হাতিয়ার করে এবার  বাজারে দাপট দেখাচ্ছে ডাব। এক লাফে দামের ডবল সেঞ্চুর হাঁকিয়েছে রোগীদের ভরসার পথ্য ডাব। রাজধানীতে বড় সাইজের প্রতিটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা করে। এছাড়া ছোট সাইজের ডাব ১৫০ টাকার কমে মেলে না। 

 

বিক্রেতাদের দাবি, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির কারণে রোগীর অন্যতম পথ্য ডাবের চাহিদা বেড়েছে। আর এতে ডাবের বাজারে সরবরাহ সঙ্কট তৈরি হয়েছে; ফলে দামও বেড়েছে।

 

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার ও হাসপাতালের সামনের সড়ক ঘুরে দেখা যায়, অস্থায়ী ডাবের দোকানগুলোতে ছোট ও মাঝারি সাইজের ডাব ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় ডাব বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।

 

দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ও খুচরা ডাবের বাজার কারওয়ান বাজারের বিক্রেতারা জানান, ঢাকায় বেশিরভাগ ডাব আসে ভোলা, নোয়াখালী, বরিশাল, বাগেরহাট, যশোর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ থেকে। আষাড়-শ্রাবণ মাসে গাছে ডাব কম থাকে। এছাড়া টানা কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে গাছে উঠে ডাব নামানো যাচ্ছেন না। এসব কারণে বর্তমান বাজারে চাহিদার তুলনায় ডাবের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় ডাবের চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে আরও কয়েকগুন বেড়েছে। এতে কারওয়ান বাজারেও প্রতি পিস ডাবের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

 

রাজধানীর মহাখালী মোড়ে ফুট ওভারব্রিজের নিচে ১০ বছর যাবত ডাব বিক্রি করেন আব্দুল মালেক নামের একজন বিক্রেতা। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আগে কখনো ২০০ টাকায় একটি ডাব বিক্রি হতে দেখিনি। এখন বাজারে ডাবের সরবরাহ কম। শ্রাবণ মাসে ডাব খুব কম হয়। এছাড়া দেশে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় সচেতন মানুষরা বেশি বেশি ডাব কিনছেন; তাই চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। দাম বাড়ার পেছনে এটাও একটা কারণ

 

রাজধানীর মুগদা হাসপাতালের পাশে ডাব বিক্রেতা এরশাদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে এখন ডাব আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বেড়েছে। বড় ডাব প্রতি ১০০ পিস কিনতে হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। পাইকারি বাজারেই একটি ডাবের দাম পড়ে যাচ্ছে ১৫০ টাকা। এরপর পরিবহন খরচ, রাস্তা খরচ, চাঁদা, গলিতে দোকান বসানোর লাইনম্যান খরচ, সারাদিনে ভ্যান খরচসহ সব মিলে ডাব ২০০ টাকাতেও বিক্রি করলে বেশি লাভ থাকে না।

তিনি বলেন, ‘এছাড়া মাঝারি ডাব পাইকারি বাজারে এখন প্রতি ১০০ পিস কিনিতে হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায়। সেই সঙ্গে ছোট ডাব ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ৯ হাজার টাকায়। এত দাম দিয়ে আগে কখনই আমরা ডাব কিনিনি। যেহেতু বাজারে ডাবের সরবরাহ কম তাই বাধ্য হয়েই  বেশি দাম দিয়ে পাইকারি কিনতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।

 

এই হাসপাতলের সামনে থেকে দুটি ডাব কিনেছেন খোরশেদ আলম নামের এক ব্যক্তি। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে আমার এক আত্মীয় ডেঙ্গু ইউনিটে ভর্তি আছে। তার কাছে যাওয়ার জন্য দুটি ডাব কিনেছি। প্রতিটির দাম পড়েছে ২০০ টাকা করে ৪০০ টাকা। আমার জীবনের প্রথম এত দামে ডাব কিনলাম। ডাবের যে দাম বর্তমানে চলছে তাতে করে সাধারণ মানুষের ডাব কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। আমার মনে হয় যাদের বাধ্য হয়ে ডাব কিনতে হচ্ছে তাদের কাছ থেকেই মূলত বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা।

 

রাজধানীর মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন অর্কর বাবার শরীরের পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণে প্রতিদিন ডাব খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। যে কারণে কিছু দিন ধরে নিয়মিত ডাব কিনছেন জাকির হোসেন অর্ক।

 

হঠাৎ ডাবের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় প্রতি পিস ডাব কিনলাম। এরপর বেড়ে দাম হলো ১৮০ টাকা। এখন সেই ডাব কিনতে হচ্ছে প্রতি পিস ২০০ টাকায়। হঠাৎ করেম কীভাবে ডাবের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেল। এরকম চলতে থাকলে আমাদের মত সাধারণ ক্রেতারা কিভাবে কিনবো?’  সূএ :  ঢাকা পোস্ট ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» অবিরাম বৃষ্টিতে বির্পযস্ত ঝিনাইদহের জনজীবন

» ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর এই প্রথম সৌদির সঙ্গে ইরানের বৈঠক

» রাতে সেমিফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ ও পিএসজি

» নতুন মামলায় আনিসুল-সালমান-আমুসহ গ্রেফতার ৯

» লেবুর খোসার যত গুণ

» এখন আর শেখ হাসিনার পালানোর পথ নেই : প্রেস সচিব

» টানা বৃষ্টিপাত চলবে আরও কয়েকদিন, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

» কক্সবাজার সৈকতে ভেসে এলো চবির আরেক শিক্ষার্থীর লাশ

» নতুন বাংলাদেশ গড়তে ‘তারুণ্যের উৎসব’ চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত : উপদেষ্টা আসিফ

» আন্দোলনকারীদের ওপর গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা, অডিও বিশ্লেষণ করে জানাল বিবিসি

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ডাবের ডবল সেঞ্চুরি!

ছবি সংগৃহীত

 

চাহিদা বাড়লে কম যোগানের অজুহাতে দাম বাড়ে—এমন পুরনো অস্ত্রকে হাতিয়ার করে এবার  বাজারে দাপট দেখাচ্ছে ডাব। এক লাফে দামের ডবল সেঞ্চুর হাঁকিয়েছে রোগীদের ভরসার পথ্য ডাব। রাজধানীতে বড় সাইজের প্রতিটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা করে। এছাড়া ছোট সাইজের ডাব ১৫০ টাকার কমে মেলে না। 

 

বিক্রেতাদের দাবি, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির কারণে রোগীর অন্যতম পথ্য ডাবের চাহিদা বেড়েছে। আর এতে ডাবের বাজারে সরবরাহ সঙ্কট তৈরি হয়েছে; ফলে দামও বেড়েছে।

 

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার ও হাসপাতালের সামনের সড়ক ঘুরে দেখা যায়, অস্থায়ী ডাবের দোকানগুলোতে ছোট ও মাঝারি সাইজের ডাব ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় ডাব বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।

 

দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ও খুচরা ডাবের বাজার কারওয়ান বাজারের বিক্রেতারা জানান, ঢাকায় বেশিরভাগ ডাব আসে ভোলা, নোয়াখালী, বরিশাল, বাগেরহাট, যশোর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ থেকে। আষাড়-শ্রাবণ মাসে গাছে ডাব কম থাকে। এছাড়া টানা কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে গাছে উঠে ডাব নামানো যাচ্ছেন না। এসব কারণে বর্তমান বাজারে চাহিদার তুলনায় ডাবের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় ডাবের চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে আরও কয়েকগুন বেড়েছে। এতে কারওয়ান বাজারেও প্রতি পিস ডাবের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

 

রাজধানীর মহাখালী মোড়ে ফুট ওভারব্রিজের নিচে ১০ বছর যাবত ডাব বিক্রি করেন আব্দুল মালেক নামের একজন বিক্রেতা। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আগে কখনো ২০০ টাকায় একটি ডাব বিক্রি হতে দেখিনি। এখন বাজারে ডাবের সরবরাহ কম। শ্রাবণ মাসে ডাব খুব কম হয়। এছাড়া দেশে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় সচেতন মানুষরা বেশি বেশি ডাব কিনছেন; তাই চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। দাম বাড়ার পেছনে এটাও একটা কারণ

 

রাজধানীর মুগদা হাসপাতালের পাশে ডাব বিক্রেতা এরশাদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে এখন ডাব আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বেড়েছে। বড় ডাব প্রতি ১০০ পিস কিনতে হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। পাইকারি বাজারেই একটি ডাবের দাম পড়ে যাচ্ছে ১৫০ টাকা। এরপর পরিবহন খরচ, রাস্তা খরচ, চাঁদা, গলিতে দোকান বসানোর লাইনম্যান খরচ, সারাদিনে ভ্যান খরচসহ সব মিলে ডাব ২০০ টাকাতেও বিক্রি করলে বেশি লাভ থাকে না।

তিনি বলেন, ‘এছাড়া মাঝারি ডাব পাইকারি বাজারে এখন প্রতি ১০০ পিস কিনিতে হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায়। সেই সঙ্গে ছোট ডাব ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ৯ হাজার টাকায়। এত দাম দিয়ে আগে কখনই আমরা ডাব কিনিনি। যেহেতু বাজারে ডাবের সরবরাহ কম তাই বাধ্য হয়েই  বেশি দাম দিয়ে পাইকারি কিনতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।

 

এই হাসপাতলের সামনে থেকে দুটি ডাব কিনেছেন খোরশেদ আলম নামের এক ব্যক্তি। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে আমার এক আত্মীয় ডেঙ্গু ইউনিটে ভর্তি আছে। তার কাছে যাওয়ার জন্য দুটি ডাব কিনেছি। প্রতিটির দাম পড়েছে ২০০ টাকা করে ৪০০ টাকা। আমার জীবনের প্রথম এত দামে ডাব কিনলাম। ডাবের যে দাম বর্তমানে চলছে তাতে করে সাধারণ মানুষের ডাব কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। আমার মনে হয় যাদের বাধ্য হয়ে ডাব কিনতে হচ্ছে তাদের কাছ থেকেই মূলত বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা।

 

রাজধানীর মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন অর্কর বাবার শরীরের পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণে প্রতিদিন ডাব খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। যে কারণে কিছু দিন ধরে নিয়মিত ডাব কিনছেন জাকির হোসেন অর্ক।

 

হঠাৎ ডাবের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় প্রতি পিস ডাব কিনলাম। এরপর বেড়ে দাম হলো ১৮০ টাকা। এখন সেই ডাব কিনতে হচ্ছে প্রতি পিস ২০০ টাকায়। হঠাৎ করেম কীভাবে ডাবের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেল। এরকম চলতে থাকলে আমাদের মত সাধারণ ক্রেতারা কিভাবে কিনবো?’  সূএ :  ঢাকা পোস্ট ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com